শিরোনাম
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি | ০৩:০৩ পিএম, ২০২০-০৮-০৭
শিরোনাম দেখে হয়ত চক্ষু চড়ক গাছ! এমন ঘটনাও কি সম্ভব! অবিশ্বাস্য হলেও এই বিচার হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশেই। বিখ্যাত মামলাটি ইতিহাসে জাস্টিস খারাক সিং মামলা নামে সুপরিচিত।
খারাক সিং ছিলেন পাটিয়ালার একজন সম্ভ্রান্ত সর্দার ও জমিদার। বিশাল তার জমিদারী। জমিদারী দেখাশোনা করতে করতে তিনি ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়েছিলেন। জমিদারিটা তাকে আর ঠিক টানছে না। সিদ্ধান্ত নিলেন ভিন্ন কিছু করবার।
পঞ্চায়েতের বিচার করতে তার কেমন যেন নেশা হয়েছিল বিচার করার। ঠিক এমন সময় পাটিয়ালার জাস্টিস আসন ফাঁকা ছিল। পঞ্চায়েতের অভিজ্ঞতাও তাকে ভেতর থেকে প্রণোদনা দিচ্ছিল বিচাররিক কিছু করবার।
সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি আর কিছু নয় জাস্টিসই হবেন।
সে সময় জাস্টিস হতে সুপারিশ লাগত মহারাজার, আর অনুমোদন দিতেন ভাইসরয়। খারাক সিংয়ের ভাগ্নেই ছিলেন পাটিয়ালার মহারাজা।
ভাগ্নের কাছে গিয়ে খারাক সিং বললেন,
ভাগ্নে জমিদারি আমার ধাতে সয়না। শুনলাম পাটিয়ালার জাস্টিসের আসন ফাঁকা। তুমি ভাইসরয়ের কাছ আমাকে সুপারিশ করে দাও। আমি জাস্টিস হবো।
ভাগনে বললেন, মামা জাস্টিস হতে পড়াশুনা জানতে হয়। বিচার প্রক্রিয়া জানতে হয়।
এসব শুনে মামা বললেন, সারা জীবন পঞ্চায়েত চালিয়েছি, তোমার কি মনে হয় আমি বিচার করতে জানি না?
অবস্থা বেগতিক হবার আগেই ভাগ্নে নিরুপায় হয়ে, খারাক সিংকে জাস্টিস বানানোর জন্য চিঠি মারফত ভাইসরয়ের নিকট সুপারিশ করলেন।
সুপারিশকৃত চিঠি নিয়ে খারাক সিং সরাসরি গেলেন ভাইসরয়ের কাছে। ভাইসরয়কে সুপারিশপত্র দেখিয়ে বললেন, পাটিয়ালার জাস্টিস পদে তাকে নিয়োগ দিতে।
ভাইসরয় সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, what is your qualification?
খারাক সিংহ উত্তর দিলেন, সব পড়া শেষ হয়েছে, সব যোগ্যতাই আছে আমার।
ভাইসরয় এবার বললেন, সর্দারজী, আমি ঐসব শিক্ষার কথা বলছি না। আমি জানতে চাচ্ছি আপনি যে জাস্টিস হবেন, বিচারক হবার কি শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে আপনার?? সত্য মিথ্যা কিভাবে বুঝবেন আপনি??
খারাক সিং এবার একটু রেগে বললেন, সারাজীবন পঞ্চায়েতের বিচার করেছি। চোখ মুখ দেখেই বলতে পারি কে সত্য আর কে মিথ্যা।
ভাইসরয় দেখলেন, ঘটনা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর তার তো শুধু অনুমোদনেরই দ্বায়িত্ব। সব দায়ভার তো মহারাজার। সুতরাং সুপারিশ না মেনে মহারাজকে চটিয়ে আর লাভ নেই। তিনি বিরস বদনে অনুমোদন দিলেন খারাক সিংকে। খারাক সিং হলেন ‘জাস্টিস খারাক সিং’।
তো জাস্টিস খারাক সিং আদালতে যেদিন আসন গ্রহণ করলেন সেদিনই তার এজলাসে এলো খুনের চাঞ্চল্যকর মামলা। লোকে লোকারণ্য এজলাস। পুলিশ ৪ জন আসামীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে।
প্রথা অনুসারে পুলিশ মামলার বক্তব্য শুরু করলেন। একটি অশ্রুসিক্ত নারীকে দেখিয়ে পুলিশটি খুনের কারণ উল্লেখ করতেই, খারাক সিং পুলিশটিকে থামিয়ে দিলেন। তিনি মহিলার কাছে সরাসরি শুনবেন।
কাঁদো কাঁদো সুরে মহিলা বললেন,
জনাব এই চারজন আমার চোখের সম্মুখে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। সর্ব ডানে যিনি আছে, তার হাতে ছিল বর্শা। আর তার পাশের জনের হাতে ছিল একটি বন্দুক। আর অন্য দুজন হাতে ছিল লাঠি। তারা চারজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করে।
খারাক সিং এবার আসামিদের উদ্দেশ্যে বললেন, কি বাপুরা লোকটাকে মেরে দিলে কেন?
প্রথম আসামী বললেন, জনাব আমার হাতে ছিল ছোট একটি লাঠি। লাঠির মাথায় গাছের ডাল কাটার জন্য ছোট ছুরি ছিল। এটা কোনো ভাবেই বর্শা নয়।
দ্বিতীয় আসামীকে জিজ্ঞেস করলে আসামী বলল, জনাব আমার হাতে পাখি মারার বন্দুক ছিল। আমি জমিতে গিয়েছিলাম পাখি শিকার করতে।
তৃতীয় ও চতুর্থ জন বলল, জনাব আমাদের হাতের লাঠি কোন মানুষ মারার উপযোগী নয়, আমরা নিতান্তই রাখাল জনাব, হাতে ছিল গরু ছাগল চড়াবার লাঠি।
আসামিদের বক্তব্য শুনেই খারাক সিং রায় লেখা শুরু করলেন।
ইতিমধ্যে কালো কোট পরা একজন দাঁড়িয়ে বললেন, জনাব আসামীরা নির্দোষ। তাদের কারো মানুষ হত্যা করার অভিপ্রায় ছিলনা। জমি নিয়ে আকস্মিক বিবাদ ও মারামারির ফলে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাই আসামীরা খুনের দায়ে দোষী হবেন না।
খারাক সিং পুলিশের কাছে জানতে চাইলেন, কালো কোট পরা লোকটা কে?
পুলিশ জানালো, লোকটি আসামীদের উকিল।
খারাং সিং এবার বললেন, ও আচ্ছা তার মানে এই ব্যাটাও আসামিদের সহকারী।
সবশেষে খারাক সিং রায় দিলেন, হত্যার অপরাধে আসামী চারজনের ফাঁসি। এবং হত্যার আসামীদের সহযোগিতা করার অপরাধে আইনজীবীকেও ফাঁসির আদেশ দিলেন।
চারিদিকে এই ঘটনা রটে গেল, খারাক সিং আসামীর সাথে সাথে উকিলকেও ফাঁসি দেন।
সূত্রঃ উপমহাদেশের আইন-আদালত ও বিচারের ইতিহাস
দৈনিক অনুসন্ধান : ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে আ...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে গৃহবধূ হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন নামের এ...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন এক মাদক ব্যবসায়ীর পরিবার...বিস্তারিত
সেলিম উদ্দিন, কক্সবাজার প্রতিনিধি : ঈদগাঁও প্রতিনিধি। ব্যাটমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে এক কিশোরের ব্যাটের আঘাতে আরেক কিশোরের ম...বিস্তারিত
সেলিম উদ্দিন, কক্সবাজার প্রতিনিধি : সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও। কক্সবাজারের ঈদগাঁও তরকারি বাজার সড়কে মুক্ত স্বর্ণ শিল্পালয় নামের এক প্রত...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : আঃ হামিদ মধুপুর টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরে অটোরিক্সা ছিনতাইকালে এক ছিনতাইকা...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 dailyonusondhan | Developed By Muktodhara Technology Limited