শিরোনাম
দৈনিক অনুসন্ধান | ০৩:৫১ পিএম, ২০২০-১১-০৫
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সারা বিশ্বের কাছে নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবারের নির্বাচনটি একটু বেশী গুরুত্ব রাখে। কারণ, ১৮৬১ ও ১৮৬৫ সালের গৃহযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে বিভাজন আমরা লক্ষ্য করেছি সেটাই আমরা এখন দেখছি। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে দেখলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর নিঃসন্দেহে। যদিও বেশিরভাগ জনমত জরিপে জো বাইডেনকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার প্রায় ৯ কোটি নাগরিক আগাম ভোট দিয়েছেন। আগাম ভোটের ওপর জনমত জরিপে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী বাইডেন এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমরা দেখছি সব ছাপিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শক্তিশালী অবস্থানই। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতো বটেই। আমরা দেখেছি জো বাইডেন জয়ের চেষ্টা করেছেন। শেষ মুহূর্তে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নিয়ে প্রচার অভিযানেও বেরিয়েছেন। সেসব কতটা কাজে লাগছে সেটি আমরা দেখছি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল যে ভোটার তারা ঠিক ছিলেন। এমনকি তিনি তা আরও বাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। যাদের কাছে ট্রাম্পের 'মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' তথা আমেরিকাকে মহান করার নীতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেই ব্যবহূত হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসী বিরোধিতা কিংবা স্বাস্থ্য খাতের নীতি তেমন প্রভাব ফেলেনি। এমনকি করোনা ব্যর্থতাও সেভাবে কাজ করেনি। আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, ডেমোক্র্যাটরা করোনা বিষয়টিকে অতিরিক্ত ব্যবহার করেছে। ট্রাম্প করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে- এটা সত্য। তার মানে এটাই একমাত্র ইস্যু নয়। ব্যর্থতার অন্যান্য বিষয় সমানতালে সামনে আনতে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন কিংবা তার প্রচারশিবির নির্বাচনী প্রচারে সেভাবে আনতে পারেননি। আমার মতে, করোনার বিষয় খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি এ অর্থে যে, এ বছরের মাঝামাঝি তথা মে-জুনের দিকে করোনা যতটা আতঙ্কের ছিল এখন ততটা নয়। সেটি বাংলাদেশ দিয়েই আমরা বুঝি। ফলে ডেমোক্র্যাটদের উপর্যুপরি একটি বিষয়ে এভাবে জোর দেওয়া সুফল হিসেবে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৯০ লাখের বেশি মানুষ এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। ডেমোক্র্যাটরা এই জুজু ধরে রাখলেও রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার পরও তিনি এ ভাইরাসকে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। নেননি তার সমর্থকরাও। শেষ মুহূর্তের প্রচারে ঝুলন্ত রাজ্য নর্থ ক্যারোলিনা, উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই র্যালির আয়োজন করেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। এমনকি তিনি ফ্লোরিডার এক সমাবেশে বলেছেন, পুনরায় জয়ী হলে দেশের প্রধান সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফুসিকে বরখাস্ত করবেন।
আমরা দেখেছি, ভোট দেওয়ার পর বুথফেরত মানুষ দুটি বিষয়ের কথা বলেছেন। একটি হলো অর্থনীতি, অন্যটি করোনাভাইরাস। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা দৃঢ়ভাবে সামনে আসতে পারত। করোনার কারণে এর মধ্যেই প্রায় ১০ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন, যা গত একশ বছরের মধ্যে আগাম ভোটের ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড। এর কারণে ভোটার 'টার্নআউট'ও বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস। যদিও দুই পক্ষের সমর্থকরাই আগাম ভোট দিয়েছেন, তার পরও আমার মনে হয় এতে ডেমোক্র্যাটরাই বেশি লাভবান হয়েছেন। কারণ, তারাই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে করোনাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। এ করোনার কারণে আগাম ভোট সেখানকার নাগরিকদের অংশগ্রহণ নজিরবিহীন বলতেই হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। দিনভর আমরা দেখেছি, উভয়েই প্রায় সমানতালে এগিয়ে ছিলেন। হাড্ডাহাড্ডি এমন লড়াই অনেকের কাছেই অকলপ্পনীয় ছিল। ভোট গণনার সময় দুই প্রার্থীর মধ্যেই ব্যবধান কম দেখা গেছে। এজন্য জয়-পরাজয় নিশ্চিত হতে অনেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। শেষের পর্যায়ে পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন আর মিশিগানের মতো 'ব্যাটলগ্রাউন্ডের' দিকে নজর ছিল সবার। আমরা দেখেছি, আগেই বিজয়ী হওয়ার কথা বলেছেন দুই প্রার্থীই। অথচ যারা ডেমোক্রেটিক দলের শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন তারা তো বটেই। অন্য 'মডারেট' সমর্থকরাও হয়তো ডেমোক্র্যাটদের একটি ভূমিধস বিজয় আশা করছিল। ওরা চিন্তা করেনি এতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
আমরা ট্রাম্পের যে সমালোচনা দেখি তার নেতিবাচকতা মার্কিন সমাজে সেভাবে পড়েনি। আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, মার্কিন সমাজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথার চেয়ে তার নীতি ও কাজের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তার কথাবার্তা কিংবা আচরণ অনেকে পছন্দ করেন না বটে কিন্তু তার জোর শক্তিমত্তা প্রদর্শন, তার বাচনভঙ্গি অনেকেই ইতিবাচকভাবে নিতে পারেন। চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিযোগিতা এবং সেটি ধরে বিরোধ এবং চীনের বিষয়টিতে মানুষের পালস বুঝে সেভাবে অবস্থান নিতে ট্রাম্প সক্ষম হয়েছেন। নাফটা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ইস্যুতে ট্রাম্প যেভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছেন সেটাও অনেকের কাছে যুক্তিযুক্ত হতে পারে। গ্লোবালাইজেশনের যুগেও ট্রাম্প বিশ্বের মধ্যে থেকেও ভিন্ন অবস্থানে আমেরিকাকে চিন্তা করছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প না জিতলে প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন। তবে আমার কাছে বিষয়টি হাস্যকর মনে হয়। কারণ, আদালতে যাওয়ার জন্য আগে নির্বাচনী ফল ঘোষণা করতে হবে এবং সেই ফলে কোনো কারচুপি বা অন্য অনিয়ম থাকলেও তার প্রমাণ আদালতে হাজির করতে হবে। আমার মনে হয় এটাও ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল। যুক্তরাষ্ট্রের জনমতও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। বলে নেওয়া দরকার যে, যুক্তরাষ্ট্রের জনমত জরিপ ও বাস্তবতার মধ্যে যে ফারাক সেটি কেন হলো। তা কি জরিপের ব্যর্থতা, নাকি ট্রাম্পের কৌশল- সেটা দেখা উচিত। ট্রাম্প যে আদালতে যাওয়ার কথা বলেছেন তা আসলে তার সমর্থকদের উজ্জীবিত রাখতে কিংবা নিজেকেও উজ্জীবিত রাখার জন্য বলেছেন।
রাজনীতি যে আবেগ সেটি ট্রাম্প বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। সে কৌশলে এগিয়ে থেকেই নির্বাচনে এগিয়ে গেছেন।
শরীফ উদ্দিন সন্দ্বীপী,
সম্পাদক, দৈনিক অনুসন্ধান
স্থানঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র,
তারিখঃ ০৫.১১.২০২০ ইং
দৈনিক অনুসন্ধান : ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জ...বিস্তারিত
স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া এক সিএনজি চালককে উদ্ধার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। এ ...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : মু. মুবিনুল হক মুবিন, চট্টগ্রাম। পবিত্র 'ইদুল ফিতর' উপলক্ষ্যে আল করন - চট্টগ্রামসহ দেশবাস...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চোর চক্রের দুইজনকে গ্...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : জাকির হোসেন সুমন , ব্যাুরো প্রধান ইউরোপ : বাংলাদেশের ৫৪তম মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভেন...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : জাকির হোসেন সুমন , ব্যাুরো প্রধান ইউরোপ : মুসলিম উম্মার বরকত, রহমত ও নাজাতের মাস মাহে র...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 dailyonusondhan | Developed By Muktodhara Technology Limited