শিরোনাম
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি | ১১:৩১ এএম, ২০২০-১২-০৬
আবদুল আউয়াল মাদ্রাসায় পড়ান। কিছুদিন আগের এক সকালে রাজধানীর বনশ্রীর সড়কে এক 'রিকশাচালক' তাকে থামান। নাম-পরিচয় দিয়ে ১০০ সৌদি রিয়ালের নোট কুড়িয়ে পেয়েছেন বলে জানান। সেটি ভাঙিয়ে দেওয়ার জন্য অনুনয় করেন। একপর্যায়ে মানি এক্সচেঞ্জ থেকে তিনি সেটি ভাঙিয়ে দেন। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ওই 'রিকশাচালক' তার ফোন নম্বর নিয়ে চলে যান।
মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। তবে আবদুল আউয়ালের ক্ষেত্রে তা সাধারণ থাকেনি। ওইদিন সন্ধ্যায় তার কাছে সেই 'রিকশাচালকে'র ফোন আসে। জানান, তার কাছে আরও রিয়াল আছে, সেগুলো অর্ধেক দামে বিক্রি করা হবে। নানা অনুনয় ও প্রলোভনে আউয়ালকে রাজিও করান তিনি। পরদিন বাড্ডার একটি ব্যাংকের শাখা থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুলে রিয়াল কেনেন এই মাদ্রাসা শিক্ষক। পরে রামপুরায় অন্য তিন ব্যক্তি তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে 'রিয়ালে'র একটি পোটলা ধরিয়ে দেয় আউয়ালকে। এরপর তারা বলে, 'দ্রুত চলে যান, সামনে পুলিশ।' তারা চলে যাওয়ার পর পরই একটি প্রাইভেটকার থেকে তিনজন বেরিয়ে ডিবি পরিচয়ে আউয়ালকে গাড়িতে ওঠায়। তাদের মধ্যে দু'জন পুলিশের এএসআই। ভুয়া রিয়াল আছে অভিযোগে আউয়ালের হাতে হাতকড়া পরানো হয়। মুক্তি পেতে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। পরে পল্লবীতে নিয়ে একটি ব্যাংক থেকে আউয়ালের কাছে থাকা চেক দিয়ে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়ে তাকে বনানী এলাকায় নামিয়ে দেয়।
শুধু আউয়াল নন, সম্প্রতি রাজধানীতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে। অভিনব এই ছিনতাই ও প্রতারণা করছে একটি চক্র। আর সে চক্রটি চালাচ্ছেন পুলিশেরই দুই সদস্য। সহযোগীদের নিয়ে ডিবি পরিচয়ে তারা রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় বৈদেশিক মুদ্রা প্রতারণা এবং ছিনতাই করে আসছেন।
বৃহস্পতিবার এই চক্রের ১০ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশ সদস্যদের নাম উঠে আসে। এরপর মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুল আউয়ালকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গত শুক্রবার রামপুরা থানায় মামলা হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ সদস্যরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুম ও সহিদ। মাসুম নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানায় কর্মরত। আর এএসআই সহিদ গোরিয়ায় মিল ব্যারাকে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) কর্মরত।
চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, এএসআই মাসুম নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে ছিনতাই করেন। কখনও সরকারি অস্ত্রও ব্যবহার করেন তিনি।
মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ। এ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, এজাহারে তাদের নাম এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এএসআই মাসুমের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে এবং এএসআই সহিদের বাড়ি ফরিদপুরে। মাসুম এক বছর ধরে আড়াইহাজার থানায় এবং সহিদ আরআরএফে রয়েছেন। তবে বর্তমানে তারা কর্মস্থলে নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে এএসআই মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এএসআই মাসুম শুক্রবার সকালে শাশুড়ি মারা গেছে জানিয়ে ছুটি নিয়েছেন।
মাসুমের বিরুদ্ধে মামলা বা ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে ওসি দাবি করেন।
এএসআই সহিদকেও পাওয়া যায়নি। তার ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। তার বিষয়ে আরআরএফের হাবিলদার মেজর এএসআই এমরান হোসেন জানান, এএসআই সহিদ ছুটিতে আছেন। ১১ ডিসেম্বর যোগদানের কথা রয়েছে। সহিদের মামলার বিষয়ে তিনিও কিছু জানেন না।
ডিবির পুলিশের লালবাগ বিভাগ গত বৃহস্পতিবার প্রতারণা ও ছিনতাই চক্রের ১০ সদস্যকে যাত্রাবাড়ী থেকে আটক করে। তারা হলেন- মহসিন শেখ, সেন্টু মুন্সি, আনিছুর রহমান, জুয়েল মিয়া, মহব্বত শেখ, শাহিন শেখ, আবুল কালাম, সুলতান মোল্লা, হেমায়েত শেখ ও কাইয়ুম শেখ।
তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহূত একটি প্রাইভেটকার, ডিবির জ্যাকেট, ওয়ারলেস সেট, এক জোড়া হাতকড়া ও পুলিশ লেখা স্টিকার উদ্ধার করা হয়।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, এএসআই মাসুম ও এএসআই সহিদ এই চক্রের হোতা। সরাসরি ছিনতাই কাজে অংশ নেন তারা। চক্রের সদস্যরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে। প্রথম ধাপে রাজধানী এবং আশপাশ এলাকায় একজন সদস্য কখনও রিকশাচালক, কখনও হকার বেশে মানুষকে অনুনয়ের সঙ্গে বলে, রাস্তায় বিদেশি মুদ্রা পেয়েছে। অশিক্ষিত মানুষ, কীভাবে এটা ভাঙাতে হয় জানে না। মুদ্রা ভাঙিয়ে দিলে তাকে একটি অংশ কমিশন দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এর পরই কৌশলে টার্গেট ব্যক্তির মোবাইল নম্বর চেয়ে নেয়। পরে ফোনে টার্গেট ব্যক্তিকে জানায়, তাদের কাছে আরও বিদেশি মুদ্রা রয়েছে। সেগুলো অর্ধেক দামে বিক্রি করবে। এমন প্রলোভনে টার্গেট ব্যক্তি রাজি হলে টাকা নিয়ে তাদের পছন্দমতো জায়গায় যেতে বলা হয়। পূর্বনির্ধারিত স্থানে আগে থেকেই প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে পুলিশ পরিচয়ে একটি দল অবস্থান করে। টার্গেট ব্যক্তি বিদেশি মুদ্রা নিয়ে টাকা নিয়ে হাজির হলে অন্য সদস্যরা কাপড়ে মুড়িয়ে মুদ্রার নামে কাগজ বা অন্য কিছু দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর সামনে আসে পুলিশের গাড়ি। তারা গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে সুবিধাজনক জায়গায় ব্যক্তিকে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। একটি যাত্রাবাড়ী থানায় এবং অন্যটি রামপুরা থানায়। শুক্রবার রামপুরা থানায় করা মামলাটির বাদী বনশ্রীর মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আবদুল আউয়াল। এই মামলায় এএসআই মাসুম ও এএসআই সহিদসহ ৯ জন আসামি।
দৈনিক অনুসন্ধান : ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়মনীতি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : জাকির হোসেন সুমন, ব্যাুরো চিফ ইউরোপ: ইতালিতে বাড়ছে বাংলাদেশীদের সংখ্যা, সেই সাথে বাড়ছে ব্যবসা প...বিস্তারিত
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবানেও চাষ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম, যার প্রত...বিস্তারিত
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : বহুতল ভবনের মাঝ বরাবর নির্মাণ করা হচ্ছে বিলাসবহুল ইনফিনিটি সুইমিংপুল। অর্থাৎ আপনি পানিতে নেমে সা...বিস্তারিত
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : এক বছরে দেশে বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে বৈধভাবে ৪৬ লাখ ভরির সমপরিমাণ ৫৪ টন সোনার বার এসেছে। এর বর্তমা...বিস্তারিত
অনুসন্ধান অনলাইন ডেস্ক : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পবিত্র রমজান উপলক্ষে দুই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। একজন ওষুধ ব...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 dailyonusondhan | Developed By Muktodhara Technology Limited