শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ০২:১৯ পিএম, ২০২০-০৬-১৪
গতকাল থেকেই কেমন জানি একটা বিষয় বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল দক্ষিন চট্টলার পিছিয়ে পড়ে জনপদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের আধুনিক কারিগর যিনি ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের মত শিক্ষার মশাল নিয়ে এ জনপদকে আলোকিত করেছেন বহুমাত্রিকতায়। উনার অহর্নিশি পরিশ্রমে আজ দেশে এবং বিশ্বের আনাচে-কানাচে কিশলয়ানদের জয়জয়কার, বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা সামাজিক দিক দিয়ে ভিন্নভাবে সু-প্রতিষ্ঠিত এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল।
হ্যাঁ! আমি বলছিলাম আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষাগুরু পরম শ্রদ্ধাভাজন চৌধুরী মুহাম্মদ তৈয়ব হুজুরের কথা। যিনি রাত নেই, দিন নেই সবসময় ধ্যানেমগ্ন থাকতেন কিভাবে শিক্ষার সব নিদের্শকে কিশলয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। পরিবার পরিজনকে তেমন সময় তিনি দেননি, যা এই প্রতিষ্টানের জন্য দিয়েছেন। আপন সন্তানের মত করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে বুকে আগলে রেখেছেন সদা সর্বদা। যখন আমি হোস্টেলে ছিলাম তখন আমাদের দৈনন্দিন দিনপন্জি শুরু হত ফজরের আজানের ধ্বনিতে। আর এ সময় দেখতাম মেঘদূতের মত আজানের অনেক আগেই স্কুল হোস্টেলের দুয়ারে দুয়ারে উনার পাঁয়চারী, পাছে না কোন অনিরাপত্তার শনিতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়। এই দৃশ্য দেখে আমার কেমন জানি মনে হত হাসপাতালের বেডে নিবিড় পরিচর্যাতে থাকা কোন শিশুর দেখভাল যেভাবে তার পিতা-মাতা করে তদ্রুপভাবে রাতের গহীন অন্ধকারে আপনালয় ছেড়ে মধ্যরাতে পাঁয়ে হাঁটা সওয়ারির বেশে প্রতিষ্টানকে আদর এবং ভালবাসার ছোঁয়াতে পরশ বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। আর দিনে স্কুল রুটিন অনুযায়ী শিক্ষক সংকট থাকলে নিজে হাজির হয়ে বা বিকল্প ব্যবস্থা করে তা সমাধান করতেন। আর একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি হুজুরের মধ্যে তিনি ভূ-গোল বিষয়ের প্রতি বেশি আসক্ত ছিলেন। নবম - দশম শ্রেণীর ভূ-গোল ক্লাস উনি নিতেন। সেখানে তিনি পৃথিবীর ম্যাপ এবং এটলাস ম্যাপের গ্লোব ইউজ করতেন। কর্কটক্রান্তি, মকর ক্রান্তি থেকে শুরু করে বিষুবরেখা এবং অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশের জটিল ব্যাখ্যাগুলোকে সহজবোধ্য করে পডানোর নিরন্তর চেষ্টা সবাইকে মোহগ্রস্ত করে তুলত। তখন আমরা হারিয়ে যেতাম পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ এবং মহাসাগরে যেখানে মহদেশীয় জলবায়ু, নদ-নদী, বায়ুমণ্ডল, নীহারিকা, গ্যালাক্সী, ধুমকেতু, ছায়াপথ এবং জীবন্ত-মৃত আগ্নেয়গিরি, সাহারা-কালাহরি, পামির মালভূমি হয়ে এন্টার্কটিকার শুভ্র বরফ পাহাডের জীবন্ত বর্ণনাতে মূহুর্তের মধ্যে কল্পনার রথে চডে পৃথিবীর আনাচ-কানাচে ডু মেরে আসতাম। আর এখান থেকে বৈশ্বিক কৃষ্টি -কালচার জানার কৌতুহলে মাল্টি ভিশনারী স্বপ্নের দ্যোতনা -ব্যাণ্জনা থেকে কিশলয়ানরা সমসাময়িক অন্যান্য প্রতিষ্টানের তুলনায় অধিক স্বপ্নবাজ হয়ে উঠে। আর এই স্বপ্নের নাটাইতে ভর করে পৃথিবীকে জয় করার অদম্য ভিত্তি রচিত হত।
এ্যাসম্বলীতে উনার শ্যেন দৃষ্টি কেউ এডিয়ে যেতে পারতনা; জুতা, প্যান্ট, শার্ট, বেল্ট, সোল্ডার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এমনকি কারো নখ বড় হয়েছে কিনা তা সকলকে হাত পাতিয়ে নিশ্চিত করে নিতেন। আর একটু সময় পেলেই বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে দেশী বিদেশী ডোনারের দুয়ারে দুয়ারে নক করতেন শুধুমাত্র স্কুলের ভবন সংকট নিরসন করার জন্য। আবার শুক্রবারে সময় পেলে নিজেই স্কুল টয়লেট ডিজ্লজিংয়ে নামিয়ে পড়তেন। এছাড়া ও অনেক অনেক সু পরিসর বর্ণনা আছে যার জন্য সময় এখানে অপ্রতুল।
প্রতিষ্টানের প্রতি কি পরিমাণ ভালবাসা এবং ডেডিকেশন থাকলে একজন মানুষ আপন পরিবার পরিজনদের তোয়াক্কা না করে এভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে তা আমার আপনার শ্রদ্ধাভাজন গুরু অংগুলি দিয়ে দেখিয়ে গেছেন। আর আশ্চর্য তখনি হই যখন মাগরিবের নামাজের পরে বা জুমার দিনে ফজর নামাজের পরে মোটিবেশনাল স্পীচে এই আলোকিত মানুষ এবং সমাজ গড়ার মহাযজ্ঞে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে উনার পাওনা বা বিনিময়রে কথা শুনে। তা হল: কোথাও কোন প্রয়োজনো বা ভ্রমণে গাড়ি দিয়ে খুটাখালী পাস হওয়ার প্রাক্কালে মাগফিরাত স্বরুপ উনার এবং অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য কিছু সুরা এবং দোয়া-দরুদ পাঠ করুরন। বার বার বলে উঠেন তোমাদেরকে মানুষ করার জন্য এই পরিশ্রম সেদিনই স্বার্থক হবে যখন তোমরা মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
আপাত:দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আজকে আমাদের জ্ঞান বিতরণের এই নি:স্বার্থ ফেরিওয়ালা দুরারোগ্যে ভূগছেন এবং আর্থিক সংকটে আছেন, তার জন্য সহযোগিতার দরকার এবং কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়! (কাউকে কটাক্ষ করার জন্য না)তার মানে এই নয় যে উনার ফ্যামিলি মেম্বারের ছবি সম্বলিত পোস্ট ফলাও করে জন সমক্ষে প্রচার করতে হবে! এতে আমরা উনার ছাত্র-ছাত্রীদের কষ্টের ফোয়ারাগুলোতে নিরবে নিভৃতে আঁচড় লেগে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় অবিরত! উনিতো জাতির দীক্ষক এবং শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ার কারিগর হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। উনাকে সহযোগিতার নামে যখন ফলাও ছবি পোস্ট হয় তখন আল্টিমেটলি উনার মর্যাদার পারদকে তাপের সংস্পর্শ আনার মত হয়ে যায় এর এতে যখন সম্মানের পারদ উঠানামা করে তখন চিন্তার বলিরেখাগুলোতে ভাঁজ পড়ে রীতিমত এবং শংকিত হয় এই ভেবে যে প্রচন্ড উদ্দাম এবং উদ্দীপ্ত মন নিয়ে শিক্ষা সংস্কারে এগিয়ে আসা অভিযাত্রিক শিক্ষাগুরুর বার্ধক্য জীবনে যদি এই পরিণতি হয় তাহলে এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে শিক্ষিত জাতি তৈরীর মিশনে আজকের প্রজন্ম আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে ফলশ্রুতিতে সু-শিক্ষার অভাবে সামাজিক অবকাঠামোতে অধ:পতন নেমে আসবে। পরবর্তী কি হবে একটু চিন্তা করলে অনুমান করা যেতে পারে! আর তখনি নিজেকে অনেক বেশী অপরাধী মনে হয় এই ভেবে যে যার সিদ্ধহস্ত দিকনিদের্শনা এবং শিক্ষাতে আজ উনার ছাত্ররা বর্ণিল আলোতে উদ্ভাসিত অথচ উনার চলমান জীবন দুরারোগ্যের ঘেরাটোপে ঘোর অমানিশাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো ছায়াতে ছেয়ে গেছে। সময় এবং কাল বহমান স্রোতের ন্যায় চলে যাবে, হয়ত: এই অজপাড়া গাঁয়ের শিক্ষার বাঁশিওয়ালার অন্তর্ধান হবে কিন্তু আমি এবং আমরা সামর্থ থাকা স্বত্তেও দায়িত্বজ্ঞানের খাতিরেও যদি উনার পরিবারের দু:সময়ে পাশে না দাঁড়াই কাল কিয়ামতের দিন আমরা কেউ মুখ দেখাতে পারবনা।
সিরাজুল কাদের, জাপান প্রবাসী, ৯৪ ব্যাচ।
দৈনিক অনুসন্ধান : অবশেষে ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। লি...বিস্তারিত
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : আজ ২১শে ডিসেম্বর (সোমবার) দিবাগত রাতটি বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ রাত। আর আগামীকাল ২২ই ডিসেম্বর হতে যাচ্ছে...বিস্তারিত
মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : রসুনের প্রাকৃতিক গুণের কথা কমবেশি আমাদের সবারই জানা। রসুন যে মানব স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী তা ...বিস্তারিত
অনুসন্ধান অনলাইন ডেস্ক : তখন গভীর রাত। এরমধ্যে ছিলো কনকনে ঠাণ্ডা। এমন অবস্থায় শতবর্ষী এক বৃদ্ধাকে ছালার বস্তার মধ্যে ভরে অ...বিস্তারিত
দৈনিক অনুসন্ধান : "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।" কবির এই বাণী আমরা প্রায় সকলেই পড়েছি কি...বিস্তারিত
অনুসন্ধান অনলাইন ডেস্ক : চাঁদের বুকে চীনের রকেট অবতরণের পর সেটি সেখান থেকে প্রথম রঙিন ছবি পাঠিয়েছে। ল্যান্ডারটি যে প্যা...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2024 dailyonusondhan | Developed By Muktodhara Technology Limited