মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪  

শিরোনাম

আমেরিকায় চট্টগ্রাম সমিতির ভোটঃ চরম পর্যায়ে দলাদলি

মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি    |    ০৯:০৬ পিএম, ২০২০-০৮-০৮

আমেরিকায় চট্টগ্রাম সমিতির ভোটঃ চরম পর্যায়ে দলাদলি

আমেরিকায় চট্টগ্রাম সমিতি নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়ছে দিনের পর দিন। সদস্যদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। দুই বছর আগে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নতুন নির্বাচন দিতে ওই কমিটি গড়িমসি করছে— এমন অভিযোগ সাধারণ সদস্যদের। তারা বলছে, অবৈধভাবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতা ধরে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, চিটাগাং অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার বর্তমান কমিটি ২০১৭ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব পায়। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের এপ্রিলে। এ হিসেবে কমিটির মেয়াদ ইতিমধ্যে দুই বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তারা নতুন নির্বাচন দিতে গড়িমসি করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমানে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি নিয়ে চলছে চট্টগ্রাম সমিতি। ১৯ সদস্যের কার্যকরী কমিটির ১১ জনই ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। বাকি দশ জনের মধ্যে একজন বহিষ্কার হয়েছেন। অন্যদিকে দুজন থাকেন বাফেলোতে এবং আরেক সদস্য বাংলাদেশে চলে গেছেন।

১১ সদস্যের উপদেষ্টা ও সম সংখ্যক ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদেরও কোনো কার্যক্রম নেই। পদত্যাগকারী সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাস পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমিতির আগের কমিটির কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করতে সভা ডাকা হয়। একই সভায় সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়। কিন্তু কার্যকরী কমিটির সভাপতি আবদুল হাই ওরফে জিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্যকরী কমিটির কথা মানতে নারাজ। তিনি প্রভাব খাঁটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের পক্ষ নেন। তাই সমিতির কার্যকরী কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ ১১ সদস্য পদত্যাগ করেন।’

সেলিম আরও বলেন, ‘তখন পদত্যাগ না করে কোনো উপায়ও ছিল না। কারণ আমরা যদি পদত্যাগ না করি, তাহলে সমিতির মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো, মারামারি হতো। এতে সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন হতো। সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্যকরী কমিটি সদস্য পদত্যাগ করায় কার্যকরী কমিটির বৈধতা এখন আর নেই। কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও আবদুল হাই অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে আছেন। আমরা চাই, নির্বাচন কমিশন গঠন করে অচিরেই সুষ্ঠু নির্বাচন।’

বর্তমান কার্যকরী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খান বলেন, ‘কার্যকরী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, এটা সত্য। কয়েক মাস আগে আমরা সাধারণ সভা ডেকেছি। রেজুলেশন অনুযায়ী সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। করোনার কারণে আমরা সহসা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারব বলে মনে হয় না। তবে আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। এখানে গ্রুপিংয়ের কারণে সদস্যদের পছন্দ-অপছন্দ আছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা কঠিন হবে। সম্মিলিত চেষ্টায় হতে পারে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন।’

কোষাধ্যক্ষ মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সমিতির এখন দুটি অ্যাকাউন্ট। ১১ জন কার্যকরী সদস্য পদত্যাগ করার পর একটি অ্যাকাউন্টে এখন লেনদেন বন্ধ। এতে ৪৮ হাজার এক শ ডলার জমা আছে। নতুন অ্যাকাউন্টে ৭০ হাজার ডলার আছে। তার থেকে ৩ আগস্ট বিগত তিন বছরের ভবন ট্যাক্সের ২৭ হাজার ডলার দেওয়া হয়েছে। বাকি আরও ৪৩ হাজার ডলার অ্যাকাউন্টে জমা আছে। আমরা চেকের মাধ্যমে সব লেনদেন করছি।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে মতিউর তাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন। তবে তিনি অবৈধভাবে সমিতি পরিচালনা করছেন বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি নিজেদের বৈধ কমিটি দাবি করেন।

সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ‘সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১১ সদস্য পদত্যাগ করার পর কার্যকরী কমিটি সংগঠন পরিচালনার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তারপরও বর্তমান কমিটি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাসে ২০১৮ সালের পিকনিকে আবদুল হাইকে আমি সহযোগিতা করেছি। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেনি। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এ ছাড়া ট্রাস্টি ও উপদেষ্টা পরিষদের ২২ সদস্যর কার্যক্রমও স্থগিত করে রেখেছে। আমি চাই দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, এই কমিটি অবৈধ। তাদের সমিতি পরিচালনা করার কোনো এখতিয়ার নাই। নানা অজুহাতে তারা সময় ক্ষেপণ করছে। শিগগিরই নির্বাচন কমিশন গঠন ও সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি। এ ছাড়া সমিতির অন্য একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে সাধারণ সদস্যরা অবগত নয়। কী লেনদেন হচ্ছে এবং কোথায় খরচ করা হচ্ছে, সে বিষয়েও কোনো ধারণা নেই। এটা একটা পকেট কমিটির মতো। যখন যা ইচ্ছা, তাই করছে তারা। সমিতির ভবন ভাড়া থেকে ৭ হাজার ডলার আসে প্রতি মাসে, সে ডলারের কোনো হিসাব নেই। করোনার সময় নিউইয়র্ক স্টেটের সব নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু করোনার দোহাই দিয়ে তারা আরও ক্ষমতায় থাকতে চান, সেটা এখন পরিষ্কার।

এদিকে সমিতির তিন প্রভাবশালী সদস্য সাবেক সভাপতি কাজী আযম, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. হানিফ ও সমিতির সাবেক ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য শাহজাহান সিরাজীর মতভেদের কারণে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা তাদের পছন্দের লোক নির্বাচন কমিশনে বসাতে সব সময় তৎপর থাকেন। তাই কমিশন গঠন করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. হানিফ বলেন, ‘নির্বাচন বিষয়ে আমি বর্তমান কার্যকরী কমিটিকে একাধিকবার বলেছি। এর বেশি আমার কিছু করার নেই। আমার দায়িত্ব ভবন ভাড়া আদায় করা এবং ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ করা। এ ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যান্য সদস্যও কোনো সভা আসেন না।

সাবেক সভাপতি কাজী আযম বলেন, ‘যথা সময়ে নির্বাচন হলে আজকের এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের সৃষ্টি হত না। আমাদের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছে না, বিষয়টি আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, সমিতির মালিক সমিতির সাধারণ সদস্যরা। আমি নই।’

শাহজাহান সিরাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি আবদুল হাই বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুত নির্বাচন দিতে। কিন্তু কোভিড-১৯-এর কারণে নির্বাচন দিতে পারছি না।’

কোভিডের মধ্যে স্টেটের সব নির্বাচন হচ্ছে। তাহলে আপনারা কেন পারছেন না— এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল হাই বলেন, এটি আঞ্চলিক সংগঠন। মানুষ ঘর থেকে বের হতে চায় না। নতুন অ্যাকাউন্ট প্রসঙ্গে বলেন, চিটাগাং সমিতির নামে বর্তমান সভাপতি, সেক্রেটারি ও কোষাধ্যক্ষের নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, চেকের মাধ্যমে সব লেনদেন হচ্ছে। নতুন কমিটি আসলে তাদের সব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে ২২ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরাও কোনো মিটিংয়ে আসেন না। এসব সদস্যের বেশির ভাগই বর্তমান কমিটির কার্যক্রমের বিরোধী বলে জানা গেছে।

সাধারণ সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম সমিতিতে দলাদলি, মারামারি ও মামলা-মোকদ্দমার জন্য চট্টগ্রাম সমিতির আগের সুনাম মুখ থুবড়ে পড়েছে। সমিতির অনেক স্বনামধন্য সম্মানিত সদস্য এখন আর সমিতির অনুষ্ঠানে যাওয়া বাদ দিয়েছেন। এ ছাড়া অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে সমিতির সামাজিক কার্যক্রমও আগের মতো হচ্ছে না।

রিলেটেড নিউজ

অটো ফেসবুক লগ আউট আতঙ্কে বিশ্ব

অটো ফেসবুক লগ আউট আতঙ্কে বিশ্ব

মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করেই ব্যবহারকারীদের আইডি স্বয়ংক্রিয়ভ...বিস্তারিত


কাপ্তাই লেকের পানিস্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

কাপ্তাই লেকের পানিস্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, বিশেষ প্রতিনিধি : কাপ্তাইয়ে অবস্থিত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র ভয়াবহ পানি সংকটে পড়েছে। পানির অভাবে বিদ্যুৎ কেন...বিস্তারিত


চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছেন শিবগঞ্জ থানার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছেন শিবগঞ্জ থানার মোঃ সাজ্জাদ হোসেন

দৈনিক অনুসন্ধান :   ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছেন শিবগঞ্জ ...বিস্তারিত


চাঁপাইনবাগঞ্জের বর্ষীয়ান সাংবাদিক ফয়সাল আজম অপু'র গ্লোবাল স্টার এওয়ার্ড লাভ

চাঁপাইনবাগঞ্জের বর্ষীয়ান সাংবাদিক ফয়সাল আজম অপু'র গ্লোবাল স্টার এওয়ার্ড লাভ

দৈনিক অনুসন্ধান :   নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ শুক্রবার বিকাল ৬ টায় গ্লোবাল স্টার কমিউনিকেশন কর্তৃক আয়...বিস্তারিত


এমপিও বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম বন্ধ চান মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকরা

এমপিও বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম বন্ধ চান মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকরা

দৈনিক অনুসন্ধান :   ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে আ...বিস্তারিত


মাদক মামলার পরিবারের ঔদ্ধত্য।। একাধিক মাদক মামলা থাকা সত্ত্বেও বিজিবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সংবাদ সম্মেলন

মাদক মামলার পরিবারের ঔদ্ধত্য।। একাধিক মাদক মামলা থাকা সত্ত্বেও বিজিবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সংবাদ সম্মেলন

দৈনিক অনুসন্ধান : ফয়সাল আজম অপু, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন এক মাদক ব্যবসায়ীর পরিবার...বিস্তারিত



সর্বপঠিত খবর

বিয়ে করে ৩ মাস সংসার করে পালিয়ে যান সন্দ্বীপের শিপন

বিয়ে করে ৩ মাস সংসার করে পালিয়ে যান সন্দ্বীপের শিপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রেম  করে পালিয়ে বিয়ে করেন মোহাম্মদ শিপন ও রিমা সরকার। বিয়ের ৩ মাসের মাথায় স্ত্রী রিমা সরকার কে ...বিস্তারিত


সন্দ্বীপে পুলিশ কর্তৃক অন্তঃস্ত্ত্বা নারী নির্যাতিত, গর্ভের সন্তান মৃত!

সন্দ্বীপে পুলিশ কর্তৃক অন্তঃস্ত্ত্বা নারী নির্যাতিত, গর্ভের সন্তান মৃত!

নিজস্ব প্রতিবেদক : কাউছার মাহমুদ দিদারঃ  চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে  সিভিল পোশাকে আসামী ধরতে গিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় ...বিস্তারিত



সর্বশেষ খবর